ভিক্টোরিয়ার নতুন আসা অভিবাসীদের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে অবিশ্বাস আছে, আর এটি তাদের দ্বিধা বাড়িয়ে তুলছে, বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য আরও কার্যকর পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন।
আফ্রিকান-অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটি নেতাদের সম্পৃক্ত করার জন্য সরকারী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ভ্যাকসিন সম্পর্কে এখনও অনেক ভুল তথ্য রয়েছে।
মেলবোর্নের উত্তরে, পাবলিক হাউজিং টাওয়ারের বাসিন্দা ব্যারি বেরিহ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি একের পর এক গুজব শুনে চলেছেন।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে মানুষ ভ্যাকসিন বিশ্বাস করে না, মানুষ এখনও অনিশ্চিত, দীর্ঘমেয়াদে কী হতে যাচ্ছে তা কেউ জানে না। ”
গত বছরের কঠোর লকডাউনের সময় হাজার হাজার টাওয়ার বাসিন্দাকে সতর্কতা ছাড়াই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, আর এতেই তাদের মধ্যে একটি অবিশ্বাস দানা বাধে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মেলবোর্নের উত্তর ও পশ্চিমে টিকাদানের হার সবচেয়ে কম।
কো-হেলথ কমিউনিটি এই পরিসংখ্যানটির উন্নতির জন্য কাজ করছে।
কো-হেলথ কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ম্যানেজার এমিট টেইলর বলেন, বহু ভাষা-সংস্কৃতির (CALD) কমিউনিটির সাথে কাজ করার ব্যাপারটি মহামারীর প্রথম দিকে অগ্রাধিকার পেয়েছিলো।
তিনি বলেন, “আমরা সত্যিই কমিউনিটি থেকে এমন লোকদের নিয়োগের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি যারা আমাদের সাথে কাজ করতে পারেন, তারা বিভিন্ন ভাষা এবং সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রতিনিধিত্ব করেন এবং এটি আমাদের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
কো-হেলথের প্রায় ১০০ জন কর্মী বিভিন্ন ভাষায় কোভিড তথ্য সরবরাহের সাথে জড়িত।
তারা বলেন যে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, কিন্তু এটি ধীরে ধীরে ফল দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা দেখছি ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিকে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে জনগণ কমিউনিটিতে কী ঘটছে সে সম্পর্কে আরও আরও জানতে পারছে।”
কিন্তু দক্ষিণ সুদানী সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, তথ্য পেতে এখনও সমস্যা রয়ে যাচ্ছে।
ভিক্টোরিয়ার সাউথ সুদানিজ কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের রিং মায়ার বলেন, তিনি প্রতিদিন গুজবের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন কারণ অনেকেই সরকারি তথ্য পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন।
ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভাষার পুরনো তথ্য পাওয়া গেছে।
রিং মায়ার বলেন, অনুবাদ করা গাইডের চেয়ে বরং অভিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত টাউন হলের সভা করলে ভালো কাজে দেবে।
তিনি বলেন, “তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাল যোগাযোগ গড়ে তোলা যায় এবং এভাবে তাদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় ।”
অ্যামব্রোস মারেঙ্গের মতো মানুষের লক্ষ্য হচ্ছে ভ্যাকসিন কর্মসূচির বিষয়ে বিশ্বাস গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, “আমি প্রতি সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘন্টা কাজ করছি। এই প্রক্রিয়ায়, কম্পিউটারে, লোকেরা আমাকে সাহায্যের জন্য ডাকছে।”
তিনি ভিক্টোরিয়া সরকারের কয়েক ডজন স্বেচ্ছাসেবক ভ্যাকসিন সমর্থকদের একজন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তারা “৮০টিরও বেশি বহু -সাংস্কৃতিক সম্প্রদায় সংগঠনগুলোকে অনুদান দিয়েছে যাতে তারা ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য তথ্য কমিউনিটিতে প্রচার করতে পারে।”
অ্যামব্রোস মারেং বলেন, অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্যাকসিন বার্তা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি।
তিনি বলেন, “অনেকে বলে যদি আমরা অসুস্থ না হই তাহলে আমাদের কেন টিকা নেওয়া উচিত, ভুল তথ্যের সাথে সাথে এসব কথাও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।”
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গারাং দুত বলেছেন, নতুন আসা কমিউনিটির লোকদের ক্ষেত্রে তাদের কমিউনিটির মধ্যে থাকা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করা উচিত। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সোর্সগুলোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্য উর্বর ক্ষেত্র বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে এমন অনেক তথ্য শেয়ার করা হয়েছে যা নিশ্চিতভাবে চিকিৎসা পেশার লোকদের কাছে ভুয়া কিন্তু প্রশিক্ষণ নেই বা স্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশোনা নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্য বিশ্বাস করার সম্ভাবনা বেশি।”
তিনি বলেন যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কোভিড বিধি লঙ্ঘনের মিডিয়া কাভারেজ এবং ফেডারেল সরকারের সহায়তা প্যাকেজগুলি শরণার্থী সম্প্রদায়ের বিদ্যমান অসুবিধাগুলি স্বীকার করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ‘আমরা এবং ওরা’ পরিস্থিতি তৈরী করেছে।
গারাং দুত বলেন, বিভিন্ন ভাষার তথ্যগুলো কমিউনিটিকে সাহায্য করে, কিন্তু একই সাথে এই ব্যবস্থা ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ার অনলাইন ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন যতক্ষণ না কমিউনিটি কোভিড মোকাবেলায় আরও অন্তর্ভুক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যকারিতা সীমিত থাকবে।