সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের করা মামলাটি এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে মামলাটি বিচারের কার্যক্রম।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত ১ এপ্রিল আদালতে সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। এরপর গত ১৫ জুলাই সাক্ষীকে জেরা করার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস এর কারণে আদালতের সব বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এসকে সিনহা সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ জুন আদালত খোলা থাকা অবস্থায় এই মামলাটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দুদকের পরিচালক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু সেদিন আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে উপস্থিত না করায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় শেষ হয়নি। এরপর তো করোনা ভাইরাসের কারণে আবারো আদালতের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা আশা করি আদালত খুললে এই মামলার বিচার কার্যক্রম খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসকে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি বর্তমানে ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষী শেষ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আদালত খোলা থাকা অবস্থায় সর্বশেষ তারিখে আসামিদের কাশিমপুর কারাগার থেকে লকডাউন এর কারণে আদালতে হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদালত নতুন দিন ধার্য করেছিলেন। ঐদিন যদি আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হতো তাহলে এতদিনে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় শেষ হয়ে যেত।
এর আগে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম গত বছরের ১৩ আগস্ট এসকে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তারও আগে, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৪ এ বদলির আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ মামলার বাদী। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। তার আগে ৪ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন দেওয়া হয়। ফারমার্স ব্যাংকের দুটি হিসাব থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ‘প্রমাণ’ পাওয়ার তথ্য গত বছরের অক্টোবরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন কথিত ব্যবসায়ী শাহজাহান ও নিরঞ্জন। সেই টাকা রনজিৎ চন্দ্র সাহার হাত ঘুরে বিচারপতি এস কে সিনহার বাড়ি বিক্রির টাকা হিসেবে দেখিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে। অভিযোগে বলা হয়, সেই ব্যাংক হিসাব থেকে পরবর্তী সময়ে টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে আছেন। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। মামলার এক আসামি মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। দুদক বলছে, মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থারত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে নতুন করে আসামি হয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণ লেখেন এসকে সিনহা। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান। পরে বিদেশ থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।