Home International ভারতকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প আঞ্চলিক ব্লক তৈরির পথে চীন

ভারতকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প আঞ্চলিক ব্লক তৈরির পথে চীন

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হলো বৃহস্পতিবার চংকিং শহরে চীন-দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর দারিদ্র্য নির্মূল ও সমবায় উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করা। প্রায় কোমায় থাকা দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা সার্ক-এর আট সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচটি বেইজিং নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। ভারত, ভুটান ও মালদ্বীপ নিজেদের অনুপস্থিতি দ্বারা অবস্থান স্পষ্ট করেছে। নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন সার্ক প্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে পড়ে তখন ভারতকে বাদ দিয়ে এই উদ্যোগ নেয় বেইজিং। এ উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল ভারতকে মোকাবিলা এবং অঞ্চলটিতে চীনের উপস্থিতি শক্তিশালী করা। এটির গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে।

নেপালের দুই প্রধানমন্ত্রীর সাবেক পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ও জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত দিনে ভট্টারাই বলেন, যদি দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য নির্মূল গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হয় তাহলে কেন ভারতকে বাইরে রাখা হয়েছে? দেশটিতে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে, যা সাব-সাহারা অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের সমান। আমি এই কেন্দ্র গঠনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত তাৎপর্য ও অর্থ রয়েছে বলে মনে করি। চীনের সঙ্গে ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

চীনা এই উদ্যোগ এমন সময় গতি পেলো যখন ভারত সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টার পাশাপাশি আরেকটি আঞ্চলিক ব্লক বিমসটেক-এ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল কোঅপারেশন (বিমসটেক)-এ সাতটি রাষ্ট্র যোগ দিয়েছে। এসব দেশ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী ও সন্নিহিত অঞ্চলের।

নেপালে চায়না স্টাডি সেন্টারের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সুন্দরনাথ ভট্টারাই বলেন, “এটি যে চীনের নেতৃত্বে ‘মাইনাস ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ, তা স্পষ্ট। দক্ষিণ এশীয় যেসব দেশ চীনা নেতৃত্বে বেল্ট ও রোড উদ্যোগের অংশ, তারাই এর অংশীদার। শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপও এতে যুক্ত হবে। কারণ, তারা বিআরই-এ যুক্ত হয়েছে।”

এই কেন্দ্র গড়ে তোলার ধারণা প্রথম তুলে ধরা হয় দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছিল। ওই বৈঠকে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও দেশটি অংশগ্রহণ করেনি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, চীন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চীনা সরকারের পক্ষে স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং ই প্রস্তাবিত চীন-দক্ষিণ এশীয় দেশের দারিদ্র্য নির্মূল ও সমবায় উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

তবে এই কেন্দ্র কীভাবে কাজ করবে, অর্থায়ন কীভাবে হবে তা বিস্তারিত জানায়নি চীন। তবে নেপালের মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উদ্বোধনী অধিবেশ দক্ষিণ এশীয় পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূত চীনের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন।

নেপালের কর্মকর্তারা জানান, এই কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সহযোগিতার জন্য চীন-দক্ষিণ এশীয় দেশের জরুরি সরবরাহ মজুত চালু করেছে চেংদু শহরে। আরেকটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাইছে বেইজিং, সেটি হলো গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য নির্মূলে চীন-দক্ষিণ এশীয় দেশের ই-কমার্স সহযোগিতা ফোরাম।

নয়া দিল্লিভিত্তিক মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-এর রিসার্চ ফেলো নিহার নায়ক বলেন, চীন দক্ষিণ এশিয়াকে টার্গেট করেছে এবং সার্কের পাল্টা সংস্থা গড়ে তুলতে চাইছে। তাই দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগের নামে সংযুক্ত হচ্ছে।

নেপালের সাবেক উপদেষ্টা ভট্টারাইয়ের মতে, সার্ক এখন সাইডলাইনে এবং প্রায় মৃত হওয়ায় চীনের এই নতুন উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্ব রাখে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্প্রতি তিব্বতের নির্বাসিত নেতা দালাই লামাকে ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোকে ভারতের চীন-নীতি থেকে বড় ধরনের সরে যাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ভট্টারাই মনে করেন, চীনা নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ এশীয় ব্লকটি হতে পারে হিমালয়ান কোয়াড গড়ে তোলার পরিকল্পনা, যা ওয়াশিংটন নেতৃত্বাধীন কোয়াডের পাল্টা ব্লক হবে এবং এতে ভারত সক্রিয় সদস্য।

নিহার নায়ক বলেন, তারা মালদ্বীপকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না। কারণ, এখানে চীনের সামুদ্রিক স্বার্থ রয়েছে এবং চীনের বিআরআই’র অংশও দেশটি। পাকিস্তান তাদের সব সময়ের বন্ধু এবং তাদের পরের টার্গেট আফগানিস্তান ও পরে বাংলাদেশে। সবশেষে আসবে নেপালের পালা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here