করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদ্যোগী হচ্ছে তখন বিপজ্জনক ভারতীয় (ডেল্টা) ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ মহামারিকে দীর্ঘায়িত করার ঝুঁকি হাজির করছে। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্টটি যুক্তরাজ্যকে বাধ্য করেছে হটস্পটে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে। নির্ধারিত ২১ জুন অর্থনীতি লকডাউন একেবারের বিষয়টিও পুনরায় বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।
কিন্তু কেন এই ভ্যারিয়েন্ট এত বেশি বিপজ্জনক? মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ আলফা, বেটা ও গামা ভ্যারিয়েন্টের মতোই। কিন্তু দুটি বিষয় এটিকে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বিপজ্জনক করে তুলেছে। প্রথমত, এটি আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি ছোঁয়াচে। অথচ মূল ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে আলফা ৫০ শতাংশ বেশি ছোঁয়াচে।
যুক্তরাজ্য সরকারের তথ্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে মোট আক্রান্তের ১ শতাংশ ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু মে মাসের মাঝামাঝিতে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ শতাংশ। জুনের শেষ দিকে এটি আলফা ভ্যারিয়েন্টকে একেবারে মুছে ফেলবে। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যার বৃদ্ধিও এটিরই ইঙ্গিত দেয়।
দ্বিতীয়ত, আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ডেল্টার সংক্রমণে গুরুতর রোগ দেখা দেয়। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি। এছাড়া এতে তরুণ বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেল্টার সংক্রমণে রোগের ভয়াবহতা যে পরিমাণ বাড়ে তা অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য অনুসারে, ফাইজার-বায়োএনটেক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৩০ শতাংশ। ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর এই সুরক্ষার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ শতাংশ এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ। মূলসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ডেল্টার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনে অ্যান্টিবডি কম উৎপাদন হলেও মোটামুটি কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া যায়।
কিন্তু ব্যাপক অর্থে বিবেচনা করলে যেখানে অধিকাংশ মানুষ টিকা নেননি অথবা মাত্র এক ডোজ নিয়েছেন সেখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উচ্চ মাত্রার ছোঁয়াচে প্রবণতা ও রোগের ভয়াবহতা আসল ঝুঁকি তৈরি করছে।
ভারতের বাইরে যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের হার বেশি। যুক্তরাজ্যে এই হার ৫ শতাংশ (ক্রমেই তা বাড়ছে) এবং জার্মানিতে ২ শতাংশ। ইতালি ও স্পেনে এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু ইউরোপীয় অন্য দেশগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের সংক্রমণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব স্থানে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছেন সেখানে যত দ্রুত সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, পরীক্ষার সংখ্যা এবং জিনোমিক নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।