মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ছয় লাখ ডলার ও ১১ কেজি স্বর্ণ গ্রহণের অভিযোগ এনেছে দেশটির জান্তা সরকার। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর এটিই সু চির বিরুদ্ধে আনা জান্তা সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিযোগ।
রাজধানী নেপিডোতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে ধরেন জান্তা সরকারের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন। তবে এখন পর্যন্ত এ অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন অভিযোগ করেন, ইয়াঙ্গুনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিয়ো থিন থেইনের কাছ থেকে সু চি অবৈধভাবে ছয় লাখ ডলার নগদ অর্থ ও ১১ কেজি স্বর্ণ নিয়েছিলেন।
জান্তা সরকারের দাবি, সু চি অবৈধভাবে যে স্বর্ণ নিয়েছেন তার মূল্য প্রায় সাড়ে চার লাখ পাউন্ড। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিটি তদন্ত করছে।
এরই মধ্যে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) এক সংসদ সদস্য জান্তা সরকারের আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সু চির বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, লাইসেন্সবিহীন রেডিও যন্ত্রসামগ্রী রাখা ও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করা। তবে এবার সু চির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ আনল জান্তা সরকার।
এদিকে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ-সমাবেশে গতকাল বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালালে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
এর মধ্যে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মায়িং শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন নিহত হয়েছে। সেখানে নিহতদের হাসপাতালে নেওয়া একজন বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে ছয়জন নিহতের তথ্য জানান। হাসপাতালের চিকিৎসকও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের নর্থ দাগোন শহরে অপর এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে নিহতের ঘটনার আগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স জানায়, মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভে ৬০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া অন্তত দুই হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি জানিয়েছে, মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর থেকে দেশটিতে চলছে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ। সেনা অভ্যুত্থানের অবসান এবং দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ সামরিক বাহিনীর হাতে আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
চলমান বিক্ষোভের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন ছিল গত ৩ মার্চ। মিয়ানমারের বিভিন্ন নগর ও শহরে সেদিন ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন।