Home International ‘আমার প্রাক্তন খারাপ, কিন্তু সামরিক জান্তা বেশি খারাপ’

‘আমার প্রাক্তন খারাপ, কিন্তু সামরিক জান্তা বেশি খারাপ’

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে রাজপথে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো নানা অভিনব শ্লোগান-প্ল্যাকার্ডসহ তরুণ প্রজন্মের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ। নতুন প্রজন্মের দেওয়া এসব বার্তা আগে কখনো দেখেনি মিয়ানমার। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

শাসকবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন মিয়ানমারে আগেও হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে এবারের আন্দোলনের চোখে পড়ার মতো পার্থক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণ প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে তুলনামূলক স্বাধীন পরিবেশে। ইন্টারনেটের সুবিধা এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসা এই প্রজন্মের প্রতিবাদের ভাষাও তাই আগের চেয়ে ভিন্ন। সাধারণত ২৪ বছরের কম বয়সীদের এই প্রজন্মকে ‘জেনারেশন জেড বা জেন জেড’ বলা হয়।

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জেনারেশন জেডের হাতে দেখা গেছে নানা ধরনের চমকপ্রদ, সুক্ষ কিন্তু তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গাত্মক কিংবা দুষ্টু বার্তা লেখা নানা প্ল্যাকার্ড।

‘আমার এক্স খারাপ, কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেশি খারাপ’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক তরুণীর হাতে থাকা কাগজে লেখা ছিল, ‘আমার প্রাক্তন (প্রেমিক) খারাপ, কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরো খারাপ।’ আবার, আরেকজনের প্ল্যাকার্ডের ভাষা একটু নরম। তাতে লেখা, ‘স্বৈরশাসন চাই না, বয়ফ্রেন্ড চাই।’

আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘প্রেম চাই, স্বৈরশাসন নয়।’

কেউ কেউ আবার জনপ্রিয় কোনো ভিডিওগেমের জনপ্রিয় বার্তা লিখে আনেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গণতন্ত্রপন্থি জাফরান বিপ্লবের পর এবারের বিক্ষোভ-আন্দোলনই সবচেয়ে বড়। লাখো মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর গতকাল সোমবার জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ ছাড়া রাজপথ না ছাড়লে বলপ্রয়োগে বাধ্য হবে বলেও জানায় পুলিশ।
তরুণ প্রজন্মের অনেকে বিক্ষোভকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো বার্তা লিখে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কোনো কোনো প্ল্যাকার্ডে কটু কথাও লেখা ছিল।

একটি প্ল্যাকার্ডের লেখাকে মার্জিত ভাষায় রূপান্তর করে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এমন—‘তোমরা ভুল প্রজন্মের সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়েছ।’

এখনকার তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে একটা কথা ঢালাওভাবে প্রচলিত আছে, তা হলো—তারা নাকি কীভাবে জীবনটা গুছিয়ে নিতে হয় জানে না। সেই বিষয়টিকে কটাক্ষ করেও বার্তা ছিল বিক্ষোভে।

একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমাদের কখনো নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’

‘আমার স্বপ্নগুলো মালের চেয়ে দীর্ঘ’

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সেনাপ্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল কারো কারো হাতে। জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সংক্ষেপে ‘মাল’ বলা হয়। জেনারেলের খর্বাকৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন কোনো কোনো বিক্ষোভকারী।

কেউ কেউ আবার মার্কিন পপ গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্ডের দৈহিক উচ্চতার সঙ্গে জেনারেল মিনের তুলনা করেন। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার পছন্দের আরিয়ানা গ্রান্ড (মালের) চেয়ে লম্বা।’

প্রখ্যাত মার্কিন র‍্যাপ সংগীতশিল্পী কার্ডি বি’র জনপ্রিয় গান ‘ডব্লিউএপি’ বা ‘ওয়্যাপ’-এর সঙ্গে মিলিয়ে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘(উই আর প্রোটেস্টিং পিসফুলি) আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছি।’

গত নভেম্বরের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অং সান সু চিসহ নির্বাচিত নেতাদের আটক করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনাবাহিনী। নভেম্বরের ওই জাতীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে।

তারপর থেকে বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ হলেও গত শনিবার থেকে মিয়ানমারে টানা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here