দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শতভাগ শিক্ষক উপস্থিত থাকবেন। অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক খোলার উপযুক্ত রাখতে মাউশি থেকে আঞ্চলিক পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সব শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহকারী উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিসারদের এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত বিদ্যালয় পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা যদি সমস্ত বিদ্যালয় পরিদর্শন না করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই না বিদ্যালয় বন্ধ থাকুক। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং বিদ্যালয় খোলার সার্বিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক পরিচালকদের নির্দেশ দিয়েছি। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খোলা যাবে। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাই রয়েছে। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং তা নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি আগেই নিয়েছিল দুই মন্ত্রণালয়। তবে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর নতুন করে খোলার সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিলে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সম্প্রতি ডিপিই ডিজি আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম ঢাকার ১৯টি বিদ্যালয়ে হঠাৎ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তব চিত্রের মিল না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন তিনি।
গত ২১ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে মহাপরিচালক বিষয়টি তুলে ধরেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতির নির্দেশনা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে হবে। ওয়ার্কশীট বিতরণ শতভাগ নিশ্চিতকরণ ও যাচাই করতে হবে। শিখন ঘাটতির অবস্থা ও ফিডব্যাক নিতে হবে। বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। হোম ভিজিট যাচাই করা। শিক্ষার্থী প্রোফাইল শতভাগ হয়েছে কিনা তা দেখা। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা। স্যাম্পল হিসেবে শিক্ষার্থীর বাড়ি যাওয়া এবং শিক্ষার্থী যোগাযোগ রেজিস্ট্রার যাচাই করা।
এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক ঠিক করার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের আদেশ যথাযথ পালন করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও দুই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার, বিদ্যালয়ে সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ, ওয়াশ ব্লক ও আঙিনা পরিষ্কার রাখাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনাও ছিল।