ঈদের আগে আটদিন বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। টানা দু’সপ্তাহ দোকান, বাজার, শপিং মল বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে আবারও সব খুলেছে। সুযোগ পেয়ে এতদিন ঘরে আটকা মানুষ ছুটছেন বাজারে ও শপিং মলে। বেশিরভাগের মুখে মাস্ক থাকলেও ভিড়ের মধ্যে গাদাগাদি করেই কিনছেন এটা-ওটা। রাজধানীর নিউমার্কেট ও কয়েকটি শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এরপর যাবতীয় মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বৃহস্পতিবার থেকে পরের বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত আটদিন শপিং মল, মার্কেট ও অন্যান্য দোকানপাট খোলা থাকবে। এসময় সরকারি সকল বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও দোকান মালিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিউমার্কেটে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন, কেউ এসেছেন সাংসারিক জিনিসপত্র কিনতে। প্রায় সবার মুখে মাস্ক থাকলেও গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে জিনিসপত্র কিনতে দেখা যায় তাদের। ঠেলাঠেলি করে কেউ কিনছেন কানের দুল, কেউ জুতা, ব্যাগ, কসমেটিকস ও পোশাক।
গাউসিয়া ও চাঁদনি চক এলাকাতেও একই দৃশ্য। ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের দোকানগুলোতেও চাপ ছিল ক্রেতার। দোকানের ভেতর নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর উপায় ছিল না কারও।
গাউসিয়ার কসমেটিকস ব্যবসায়ী আজমল জানান, ‘ক্রেতাদের চাপ দোকানের ভেতর এসে পড়লে সামলানো মুশকিল হয়ে যায়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সামাজিক দূরত্ব মানানো যায় না। এখন কাস্টমার কমিয়ে দিলে দেখা যাবে তিনি আরেক দোকানে চলে যাবেন। সবদিকেই সমস্যা।’
মিরপুর থেকে চাঁদনি চকে পরিবারসহ কেনাকাটা করতে এসেছেন একরাম। সঙ্গে দুই শিশুসন্তানও ছিল। শিশুদের নিয়ে ভিড়ের মধ্যে গাদাগদি করে কেনাকাটা করা ঠিক হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু করার নাই।’
শপিংমলগুলোতেও একই চিত্র। মাস্ক পরে মার্কেটে প্রবেশ করছেন ঠিকই, কিন্তু ভেতরে গাদাগাদি। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে দেখা যায়, ক্রেতারা লাইন ধরে মার্কেটে ঢুকছেন। ঢোকার সময় শরীরের তাপমাত্রা মাপা হলেও ভেতরের চিত্র নিউমার্কেটের মতোই। সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতা দেখা যায়নি কারও মধ্যে। এসকেলেটর ও লিফটে গাদাগাদি করেই উঠছেন সবাই।
মলটির দায়িত্বরত এক কর্মচারী জানান, ‘মার্কেটের সামনে ও ভেতরে একটু পর পর মাইকিং করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও শোনে না কেউ।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ কমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘লকডাউন শিথিল করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আশা করি সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা এমনভাবে ঘোরাফেরা না করি, যাতে ঈদের আনন্দ ট্রাজেডিতে পরিণত হয়। মানুষ মারা গেলে ঈদ আর ঈদ থাকবে না।’
মহামারিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সেইসঙ্গে সারাদেশে কঠোর লকডাউন আরও ১৪ দিন বাড়ানোসহ কোরবানির পশুর হাট বন্ধ রাখারও সুপারিশ করেছে তারা।