Home Bangladesh রাজশাহীর হাটে পশু কেনাবেচা জমজমাট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

রাজশাহীর হাটে পশু কেনাবেচা জমজমাট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

ঈদুল আজহায় ত্যাগের মহিমায় করা হবে কোরবানি। আর এই কোরবানিকে সামনে রেখে রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে সবচেয়ে বড় হাট ‘সিটি পশুর হাট’ জমে উঠেছে। অনলাইন পশুর হাটও জমজমাট। এ বছর রাজশাহী বিভাগে অনলাইনের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতর।

করোনা মহামারির এই সময়ে সিটি পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বাড়ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে হাট পরিচালনা করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধির বালাই থাকছে না। হাটের সামনে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করে মাইকিং ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেই দায় সারছেন হাট ইজারাদার।

ঈদের আগে সাপ্তাহিক বড় হাট রবিবার (১৮ জুলাই) নগরীর সিটি হাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বাড়তি কোনও নজরদারি নেই। নেই বাধ্যতামূলক মাস্কের ব্যবহার কিংবা সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে মাস্ক থাকলেও তা সঠিক নিয়মে পরছেন না। কখনও নাকের নিচে আবার কখনও হাতে ঝুলিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর দুর্গন্ধযুক্ত সিটি ভাগাড়ের উপরই কর্দমাক্ত পরিবেশেই বসেছে হাটের একাংশ। এতে হাটে করোনা ঝুঁকিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকছে।


পশু ব্যবসায়ী তাইবুর রহমান জানান, ঈদের শেষ সময়ে জমে উঠেছে পশুর হাট। এতে করে গরু-মহিষের সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকে মাস্ক পরছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে মাস্ক পরছে না।

তিনি জানান, এবার হাটে মহিষ ও ছোট গরুর সরবরাহ বেশ ভালো। মাঝারি ও কোরবানিযোগ্য ছোট গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। গরু ব্যবসায়ী সোহরাব আলী জানান, তিনি জেলার বিভিন্ন জায়গার বাড়ি বাড়ি থেকে গরু কিনে হাটে এনে বিক্রি করেন। গতবার যেসব গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন সেসব গরু এবার ক্রেতারা এক লাখ ১০ হাজার টাকার উপরে দাম বলছেন না। হাটে গরু সরবরাহ ভালো আছে। আর মাঝারি আকারের গরু ৪০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।


টি পশুর হাট ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু জানান, রাজশাহীর এই বৃহত্তম সিটি পশুর হাট ঈদের আগ পর্যন্ত চলবে। এবার হাটে পশুর আমদানি যথেষ্ট পরিমাণ আছে। হাটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে তারা তৎপর রয়েছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় মাইকিং করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সতর্ক করা হচ্ছে।

এদিকে, রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বসেছে অস্থায়ী ছাগলের হাট। তবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা না থাকায় এবার বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও জিরো পয়েন্টের বড় মসজিদের সামনে ক্ষুদ্র পরিসরে বসেছে ছাগলের হাটটি। এই হাটের ক্রেতাদের ভাষ্য, বাড়িতে ছাগল রাখার জায়গা নেই। ঈদের আগের দিন ক্রয় করে বাড়ির গ্যারেজে রেখে কোরবানি দেওয়া হবে।

অপরদিকে, রাজশাহী বিভাগে ১৪২টি পশু কেনাবেচার সরকারি অনলাইন মার্কেট তৈরি করা রয়েছে। ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এসব মার্কেট পরিচালনা করা হচ্ছে। বেসরকারিভাবে ওয়েব সাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক হাজার ১০৯টিরও বেশি পশুর মার্কেট রয়েছে। আর এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে অনলাইন মার্কেটে প্রায় আড়াই কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হয়েছে।

সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বসেছে অস্থায়ী ছাগলের হাট
কোরবানির পশু ডিজিটাল হাট, অনলাইন পশুর হাট রাজশাহী, অনলাইন পশুরহাট নওহাটা, মোহনপুর অনলাইন পশুর হাট, অনলাইন কোরবানির পশুর হাট জয়পুরহাট, পাবনা ই-বাজার, এমআরএফ গ্রুপ পাবনাসহ অনলাইনে বিভিন্ন নামে এসব মার্কেট খোলা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত অনলাইন মার্কেটে রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৫০ হাজারসহ মোট ৪ লাখ ৩৮ হাজার গবাদিপশুর ছবিসহ বিবরণ আপলোড করা হয়েছে বলে জানায় দফতর। তবে ঈদের আগে পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে তারা।

রাজশাহীর খামারি ও কৃষি উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল। তিনি অনলাইন মার্কেটের মাধ্যমে গত বছর থেকে তার খামারের পশু বিক্রি করছেন। তিনি জানান, অনলাইন মাধ্যমে পশু বিক্রিতে তিনি খুব ভালো সাড়া পেয়েছেন। গত সপ্তাহে তার খামারের কোরবানিযোগ্য ছয়টি গরু বিক্রি অনলাইনে বিক্রি করেছেন। অনলাইন মার্কেটে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করাটাই মূল। এক্ষেত্রে একজন অনলাইন বিক্রেতাকে বেশি কিছু পলিসি নিতে হয়।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইসমাইল হক বলেন, ‘নগরীসহ রাজশাহী জেলায় কোরবানির চাহিদার চেয়ে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজারের মতো বেশি পশু আছে। এগুলো বাইরে সরবরাহ হয়। এবার অনলাইন পশুর হাটে কেনাবেচা বেড়েছে। সর্বোপরি পশুর সংকট কিংবা পশু অবিক্রিত থেকে যাবে এমন শঙ্কা নেই।’ তিনি জানান স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে হাট ইজারাদারকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া হাটে তাদের তিন সদস্যের একটি টিম আছে যারা অসুস্থ পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক উত্তম কুমার দাস জানান, সারাদেশে মোট প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে। এর প্রায় ১০ শতাংশ অনলাইন মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। বাকিটা আগের গতানুগতিক পদ্ধতিতেই বেচাকেনা হবে। বর্তমানে বিভাগে সরকারি-বেসরকারি প্রায় দেড় হাজারের মতো অনলাইন পশুর হাট রয়েছে। বিভাগের অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় এখন অনলাইন পশুর হাট রয়েছে।

তিনি আরও জানান, অনলাইন পশুর হাটকে ঘিরে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা আছে। তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে অনলাইন হাটে পশু কেনাবেচায় কোনও প্রতারণা কিংবা হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here