ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আগস্ট মাসেই শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান সমীরণ পান্ডা এই আশঙ্কা জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, এখনই সতর্ক না হলে তৃতীয় ঢেউ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্য প্রতিটি রাজ্যকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ একেক রাজ্যে একেক রকমভাবে এসেছে। সেই পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে প্রতিটি রাজ্যকে তার মতো করে সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমীরণ বলেন, কিছু রাজ্য রয়েছে, যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। কিন্তু সেখানে তৃতীয় ঢেউ মারাত্মক হতে পারে। কাজেই অসাবধানতার কোনো অবকাশ নেই।
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় ঢেউ অল্প বয়স্কদের কাবু করতে পারে বলে একটা ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে রয়েছে। আইসিএমআরের বিশেষজ্ঞদের ধারণাও তা–ই। তাঁরা বলছেন, মোকাবিলার একমাত্র উপায় গণটিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে মেনে চলা। টিকা নেওয়া থাকলে তৃতীয় ঢেউ মারণ রূপ ধারণ করতে পারবে না বলে অভিমত তাঁদের।
তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই নিজে থেকে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছে। গণটিকাদানের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের কঠোর মনোভাব আঁচ করে প্রধানমন্ত্রী টিকা নীতিতে পরিবর্তন আনেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব বুঝে উত্তরাখণ্ড সরকার ‘কানোয়ার যাত্রা’ বাতিল করে দেয়। শ্রাবণ মাসে হিন্দু দেবতা শিবের মাথায় গঙ্গার জল ঢালা পুণ্যার্জনের এক রীতি বলে বিবেচিত।
সে জন্য উত্তর ভারতে ধর্মপ্রাণ জনতা হরিদ্বারের গঙ্গা থেকে জল সংগ্রহ করে শ্রাবণ পূর্ণিমায় হেঁটে শিবের মন্দিরে যান।
উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার সেই যাত্রা এবার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ তা করতে রাজি নন। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারকে সিদ্ধান্ত বদলের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, রাজ্য সরকার নিজে থেকে যাত্রা বন্ধ না করলে সর্বোচ্চ আদালত তাদের বাধ্য করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট চান না, তৃতীয় ঢেউয়ের হুমকির মধ্যে কুম্ভ মেলার মতো ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটুক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এর মধ্যে ৪১ কোটি ৬৯ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৬৬ কোটি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এবার থেকে এই টিকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে।
ডোজপ্রতি কোভিশিল্ডের দাম পড়বে ৬৫ রুপির বেশি, কোভ্যক্সিনের ৭৫ রুপি। এত দিন টিকাপ্রতি সরকারের খরচ হতো ১৫০ রুপি।
বিজ্ঞাপন
ভারতে বর্তমানে প্রতিদিন নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ৫০ লাখ ডোজ টিকা কম দেওয়া হচ্ছে। এই গতিতে চললে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার আওতায় আনতে আগামী বছরের অর্ধেক লেগে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।