Home International বোমাবর্ষণের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

বোমাবর্ষণের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

কৃষ্ণসাগরে বিরোধপূর্ণ অংশে বুধবার ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের অনুপ্রবেশের জেরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে রাশিয়ার। মস্কোয় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ওই ঘটনার ব্যাখা চেয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ব্রিটিশ জাহাজে বোমাবর্ষণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

বিবিসি জানিয়েছে, ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর একটি রণতরী বুধবার ওই এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় রাশিয়ার কোস্ট গার্ডের দুইটি জাহাজ এবং ২০টিরও বেশি জঙ্গিবিমান সেটিকে অনুসরণ করতে থাকে। মস্কোর প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে, তাদের টহল জাহাজ থেকে ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির জাহাজ এইচএমএস ডিফেন্ডারকে সতর্ক করে দুইটি গোলা ছোঁড়া হয়। জাহাজের পথের সামনে জঙ্গিবিমান থেকে একটি বোমাও নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, এসব কিছুই ঘটেনি।

বিষয়টি নিয়ে দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়ানকভ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুধবারের ঘটনার অবতারণা করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেবল পথে নয়; বরং লক্ষ্যবস্তুতেও (ব্রিটিশ জাহাজ) বোমাবর্ষণ করা হবে।’

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রা মারিয়া জাখারোভা সাগরে যুক্তরাজ্যের তৎপরতাকে মারাত্মক কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এই ঘটনা নিয়ে বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার এক নিবন্ধে লিখেছেন, ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর উস্কানি, নাকি সমুদ্র চলাচলে আইনগত অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা? এটা নির্ভর করবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তিনি লিখেছেন, ব্রিটেন ইউক্রেনের জোরালো সমর্থক। তাদের যুক্তি, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে জর্জিয়ায় যাওয়ার জন্য এইচএমএস ডিফেন্ডারের জন্য ওটাই ছিল সবচেয়ে সোজা পথ। কিন্তু ওই পথটি ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের কয়েক মাইল দূর দিয়ে যায়। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো ওই দখলদারিত্বের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রাশিয়ার ওই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।

মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন

ওই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একগাদা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাশিয়া ক্রিমিয়াকে দেখানোর চেষ্টা করছে রুশ মাতৃভূমির সঙ্গে একত্রীকরণের উদাহরণ হিসেবে। কারণ, ক্রিমিয়ার জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জাতিগতভাবে রুশ। গত বুধবারের ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে তা সেভাস্টোপল বন্দরের খুব কাছে। কৃষ্ণ সাগরের এই বন্দরে রাশিয়ার একটি বড় নৌঘাঁটি রয়েছে এবং রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিট নৌবহরও এই বন্দরে নোঙ্গর করা রয়েছে।

মস্কোর ‘শত্রু’ ন্যাটো জোটের সদস্য ব্রিটেনের একটি আধুনিক ডেস্ট্রয়ার যখন ৯ হাজার ৬৫৬ কিলোমিটার দূরে নিজের বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমন এক পানিসীমার ভেতর দিয়ে যেতে চাইছিল যাকে রাশিয়া নিজের বলে দাবি করে, তখন মস্কো একে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করে। সে কারণেই ডেস্ট্রয়ারটি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রুশ নৌবাহিনী বেতারের মাধ্যমে জাহাজটিকে সতর্ক করে এবং তার ওপর দিয়ে রুশ বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান টহল দিতে থাকে।

রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনে ব্রিটেন কী অবাক?

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনা তাদের মোটেই অবাক করেনি। গত বছরও রাশিয়া তারা একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাকে খাটো করে দেখলে ভুল হবে।

এটা মনে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউক্রেনের পুরোটা, কৃষ্ণ সাগর এবং ক্রিমিয়ান উপদ্বীপকে রাশিয়া তার ব্যাক ইয়ার্ড বা বাড়ির পেছনের উঠান বলে মনে করে। মাত্র ৩০ বছর আগেও রাশিয়া ছিল বিশাল সোভিয়েত সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ওয়ারস জোট। এই দুটি মিলিয়ে সোভিয়েত প্রভাব বলয় জার্মানির সীমান্ত থেকে শুরু করে আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতো। কিন্তু এখন পোল্যান্ড কিংবা বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী অনেকগুলো দেশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। তাই মস্কো মনে করছে, শত্রুরা চারিদিক থেকে তাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছে এবং তার বিপদ ক্রমেই বাড়ছে। সেজন্যই বুধবারের ঘটনাটি দেখতে যতটাই নাটকীয় লাগুক না কেন, ভবিষ্যতে এটা বড় কোনও নাটকের ‘ড্রেস রিহার্সাল’ হতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া যেভাবে প্রকাশ্যে ব্রিটিশ জাহাজে বোমাবর্ষণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেটি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here