Home International বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা

বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসহ গঙ্গা ও পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। চলতি মাসের শেষে ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক নদনদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে আগামী মাসে বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলতি বছর আগে থেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে ভাগ্যকুল পয়েন্টে ৫৫ এবং লরেরগড় পয়েন্টে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দেশের উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে গ্যাংটকে ৭৬, তেজপুরে ৩৬ এবং শিলচর ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনের সংখ্যা হচ্ছে ১০১।  এরমধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৫৩ টি পয়েন্টের, কমেছে ৪২ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টি পয়েন্টের পানি।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, চলতি মাসের একেবারে শেষ দিকে ভারী বৃষ্টি আবারও শুরু হবে। এতে নদ নদীর পানি বাড়তে শুরু করবে। আমরা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে ইতোমধ্যে বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছি। সুতরাং আগামী মাসের শুরুর দিকে একটা স্বল্পমেয়াদী বন্যার দেখা আমরা পেতে পারি।

পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক বলেন, চলতি বছর উত্তর ভারত বর্ষা প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে আসাম ও উত্তর ভারত থেকে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এই অবস্থায় একটি মাঝারি আকারের বন্যার শঙ্কা আছেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারাই আছে, যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ যারা ত্রাণ দেন এমন সবাই মিলে এখন সভা করে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, গতবার নদী অববাহিকায় বন্যা হলেও এবার গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে যেতে পারে।  তাই এখনই প্রস্তুতি দরকার।

এদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, জুন মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। জুন মাসের প্রথমার্ধে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি বা তীব্র বজ্রঝড় ও দেশের অন্য এলাকায় ৩ থেকে ৪টি হালকা বা মাঝারি বজ্রঝড় হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পূর্ব উত্তর প্রদেশ, বিহার,লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও মধ্যাঞ্চল হয়ে  উত্তর পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু  বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় আছে। এসবের প্রভাবে খুলনা,  বরিশাল,চট্টগ্রাম,  ঢাকা,  রাজশাহী,   রংপুর, সিলেট ও  ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।  

এদিকে দেশের নদীবন্দরগুলোর জন্য এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, আজ রাত ১ টা পর্যন্ত ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর,  যশোর,  কুষ্টিয়া,  খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী,  নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ  ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিকে দক্ষিণ -দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী ভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য এসব এলাকার বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here