আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। একই সঙ্গে কাবুলে ইউরোপীয় দেশগুলোর এ জোট কূটনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ বোরেল বলেন, আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার মাধ্যমেই কেবল দেশটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে প্রভাব রাখা সম্ভব।বিজ্ঞাপন
জোসেফ বোরেল বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর সেখানে ইইউর সদস্যদেশগুলো দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারা এখনই সেগুলো খুলছে না। তবে দেশটিতে ইইউর কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের উপস্থিতি থাকবে। আমরা কোনো রাষ্ট্র না হওয়ায় সেখানে দূতাবাস খুলতে পারছি না। ’
জোসেফ বোরেল বলেন, তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট শর্তাবলি পূরণ হলে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে। ভিডিও কনফারেন্স বা বার্তা আদান-প্রদানের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ পন্থায় এ আলোচনা হতে পারে।
তালেবানের ঝোড়োগতির অভিযানের মুখে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকারের রাতারাতি পতনকে একটি ‘দুঃখজনক ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইইউর এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ যতটা আশা করেছিলেন, আফগানিস্তানে ‘জাতি গঠন’ করাটা ছিল তার চেয়েও কঠিন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে আফগানিস্তানে সেই সময় ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে উৎখাতে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। এরপর তালেবান সরকারকে উৎখাত করা গেলেও দীর্ঘ দুই দশকের আফগান যুদ্ধে মারা গেছেন হাজারো মানুষ। দেশটিতে ফেরেনি শান্তি। এখন ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সেই তালেবানই আবার ক্ষমতায়।বিজ্ঞাপন
সাবেক স্প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরেল বলেন, ইইউ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, তবে আফগানিস্তানের নতুন এ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করার আছে।
খবরে বলা হয়, তালেবানের সঙ্গে এখন যোগাযোগ শুরুর শর্ত নিরূপণ করছে ইইউ। শর্তের মধ্যে আফগানিস্তানে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টিও থাকবে।
জোসেফ বোরেল বলেন, ‘আফগানিস্তানে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যদি কোনো পথ খোলা থাকে তবে সেটি হলো, তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এর বিকল্প পথ নেই।
যোগাযোগ রক্ষা করার অর্থ, আলাপ-আলোচনা ও সম্ভব ক্ষেত্রে একমত হওয়া। ’
আফগানিস্তান থেকে আগামী মাসগুলোতে আরও মানুষ দেশ ছাড়তে চাইতে পারেন। এ নিয়ে সম্ভাব্য অভিবাসন সংকটে উদ্বিগ্ন ব্রাসেলস ও ইউরোপীয় দেশগুলো।
আফগানিস্তানে ১০ কোটি ইউরো সহায়তা দেবে ইইউ
এএফপি জানিয়েছে, ইইউর প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বুধবার আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করার অঙ্গীকার করেছেন। ২৭ জাতির এই জোট আফগান জনগণের পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেওয়া এক বার্ষিক ভাষণে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আফগানিস্তানে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত ঝুঁকি এড়াতে আমাদের সবকিছু করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যা করার করব। আফগানিস্তানে আমরা আবার মানবিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করব। দেশটিকে ১০ কোটি ইউরো সহায়তা দেব আমরা। ’
ইইউর আশঙ্কা, আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের জের ধরে ইউরোপের দেশগুলো অভিমুখে আবার শরণার্থীদের ঢল নামতে পারে, যেমনটা সিরীয় যুদ্ধের কারণে ২০১৫ সালে দেখা দিয়েছিল।
তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার শর্ত হিসেবে ইইউ এরই মধ্যে কিছু বিষয় নির্ধারণ করেছে। যেমন মানবাধিকার রক্ষা করা ছাড়াও নতুন এই শাসকদের আফগানিস্তান ছড়াতে ইচ্ছুক লোকজনকে নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দিতে হবে, একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে হবে ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে গত সোমবার আফগানিস্তান নিয়ে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সহায়তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আহ্বানে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আফগানিস্তানকে ১২০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।