ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাস রাখার জন্য রাজধানীর বাইরে চারটি অন্তঃজেলা টার্মিনাল করে শহরের ভেতরেরগুলোকে সিটি টার্মিনালে রূপান্তর করা হবে। এতে ঢাকা শহর থেকে বাসের চাপ কমে যাবে, ফলে কমবে যানজট।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বাস রুট রেশনালাইজেশনের ১৫তম সভা শেষে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
তাপস বলেন, ‘আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১০টি স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। এগুলো সরেজমিনে আমরা পরিদর্শন করেছি। সরেজমিনে পরিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্ধারণ করেছি। উত্তরের জেলার বাসগুলোর জন্য বিরুলিয়ায় একটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয়ত হেমায়েতপুরে আরেকটি জায়গা নির্ধারণ করেছি বাস টার্মিনালের জন্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইর ও কাঁচপুরের উত্তরে আরও দু’টি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ চারটি জায়গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে ঢাকা শহর থেকে বাসের চাপ কমে যাবে। সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালকে আমরা সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো। বাকি চারটি টার্মিনাল ঢাকামুখী যানবাহনগুলোর জন্য ব্যবহার করতে পারবো। প্রাথমিকভাবে আমাদের এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত মন্ত্রী বরাবর সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। আশা করি অনতিবিলম্বে তারা কাজ শুরু করলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো।’
সিটি বাস সার্ভিসের রুটে কিছুটা পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাপস বলেন, ‘ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুট- আমরা এখন এটাকে কাচপুর পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছি। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রায় ৩৪টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস বে হবে এবং কিছু কিছু জায়গায় বাস স্টপেজ হবে। এটাকে এখন কিছুটা বাড়াতে হবে। যেহেতু রুট বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি জানান, প্রাইলট প্রকল্প হিসেবে যে রুট নির্ধারণ করা হয়েছে, দুই সিটির প্রকৌশলীরা বসে ঠিক করবেন, তার কোথায় বাস বে হবে, কোথায় স্টপেজ হবে। সে অনুযায়ী যাত্রীদের সজন্য সুযোগ-সুবিধা প্রস্তুত করা হবে।
‘শুধুমাত্র মতিঝিল পর্যন্ত হলে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। এ জন্য আমরা ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত বর্ধিত করছি। সেই প্রেক্ষিতে বাকি আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজটা সেই পর্যন্ত বর্ধিত করব।’
কতগুলো কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকায় বাস চালানো হবে, সেই নীতিমালা শিগগিরই তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যে কোম্পানির মাধ্যমে চলবে, কতগুলো বাস চলবে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হবে, আয় কিভাবে বণ্টন হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে- সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নীতিমালা হবে। আশা করি ঢাকা পরিবহন সম্বয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনদের নিয়ে বসে একটি খসড়া তৈরি করবে। আগামী সভার আগেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করলে কোম্পানি গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
রাত ১২টার পরে যত্রতত্র বিআরটিসির বাস রাখতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তাপস বলেন, ‘আগামী ২৬ জানুয়ারি বিআরটিএকে ভাড়া নির্ধারণের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা সেখানে সিদ্ধান্ত নেবে। গত সভায় একটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম, রাত ১২টার পর বিআরটিসির বাস যত্রতত্র রাখা যাবে না। এই বাসগুলো তাদের নিজস্ব ডিপো-টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। তবে কিছু বাস এখনো বাইরে থাকছে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিআরটিসি সকল বাস থাকার ব্যবস্থা করবে।’
পাশাপাশি বিআরটিএকে তাদের যানবাহনের তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে জানিয়ে দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘এখানে তথ্যগত কিছু ভুল রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন হালনাগাদ করা হয়নি। তাদের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ করবে। সামগ্রিকভাবে পুরো বিষয়টা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে হালনাগাদ করবে। এই সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
যাত্রী ছাউনি এবং বাস বেরসহ অবকাঠামো নির্মাণে কিছু জমির প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হবে, যাতে কমিটির আগামী সভায় তারা থাকেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এখন যারা চলছে, অন্যরা যারা এই রুটে চলতে চায়- সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করব। মালিকপক্ষ পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবে, বিশেষজ্ঞদের সাথে বসবে। অন্যরাও যারা এই রুটে বাস পরিচালনা করতে চায়, তাদেরও আমরা নেব, কোম্পানির মাধ্যমে। যাতে করে আয় ও ব্যয়টা ভাগাভাগি করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
‘নীতিমালার আলোকে প্রাথমিকভাবে জয়েন্ট ভেনচার এগ্রিমেন্ট হবে, যেহেতু এটা পাইলট। এরপর আমরা এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ কোম্পানি হিসেবে চালু করব, যাতে করে সুষ্ঠুভাবে শৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা আসে।’