মহারাষ্ট্রে যখন করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির প্রকোপ অনেক বেশি ছিল তখন আওরঙ্গবাদের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ১৫০টি ভেন্টিলেটর এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এসে পৌঁছায়। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগুলো পাঠিয়েছিল।
হাসপাতালটি এসব ভেন্টিলেটর বিভিন্ন জেলায় ও বেসরকারি হাসপাতালে বিতরণ করে। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় অনেক হাসপাতাল সেগুলো ফেরত পাঠায়। ডাক্তারদের অভিযোগ, এসব ভেন্টিলেটর রোগীদের ব্যবহার উপযোগী না।
এসব হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা চিকিৎসায় নিয়োজিত আট বিশেষজ্ঞের দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভেন্টিলেটরের সুইচ অন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগীরা শ্বাস নিতে না পারাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
ভেন্টিলেটরগুলোর নির্মার্তা কোম্পানি জ্যোতি সিএনসির একদল প্রকৌশলী ১৪ মে এগুলো মেরামত করেন। কিন্তু ২৮ মে বোম্বে হাই কোর্টের একটি আদেশে ডাক্তারদের প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাতারাতি সেগুলো ভালো কাজ করছিল কিন্তু পরদিন দুপুরে রোগীরা অক্সিজেন কম পাওয়া এবং অস্থিরতার অভিযোগ করেন।
২৮ মে পর্যন্ত ১৫০টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে বাক্স থেকে খোলা হয়েছে এমন ১১৭টি ভেন্টিলেটর অব্যবহৃত পড়ে আছে। আওরঙ্গবাদের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বোম্বে হাই কোর্টকে জানায়, আগের গুলোর অভিজ্ঞতায় অবশিষ্ট ৩৩টি ভেন্টিলেটর ব্যবহারের কোনও মানে তারা দেখতে পাচ্ছেন না।
বিড় জেলার একটি হাসপাতালের ডিন ডাক্তার শিবাজি বালাবাউ বলেন, এগুলো ব্যবহার করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। যখন শতভাগ অক্সিজেন প্রয়োজন তখন মাত্র ২০ শতাংশ পেলে রোগীর মৃত্যু হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গত বছর মার্চ ও এপ্রিলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২ হাজার ৩৫০ কোটি রুপি ব্যয়ে ৬০ হাজারের বেশি ভেন্টিলেটর ক্রয় করে। এর মধ্যে ৫০ হাজার ভেন্টিলেটর প্রধানমন্ত্রীর কেয়ার তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি রুপিতে কেনা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুসারে, প্রধামন্ত্রীর কেয়ার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেনা এসব ভেন্টিলেটর বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বরাদ্দ দেওয়ার ফলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেশিনের প্রাপ্যতা তিনগুণ বেড়েছে।
কিন্তু অনেক রাজ্য কেন্দ্রের এই দাবি মানতে রাজি না। তাদের কথা হলো, প্রাপ্যতা ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয় না। মহারাষ্ট্র ছাড়াও অন্তত আরও চারটি রাজ্য– রাজস্থান, পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড় প্রকাশ্যে এসব ভেন্টিলেটর নিয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্র সরকার ভেন্টিলেটরগুলো ঠিক আছে দাবি করেছে, সমস্যা হলো রাজ্যগুলো কর্তৃক এগুলো পরিচালনায়।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেন্টিলেটর নিয়ে এসব সমালোচনা রাজনৈতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বেশিরভাগ অভিযোগ বিরোধীদের শাসিত রাজ্য এসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সমালোচনা বাড়তে থাকায় নরেন্দ্র মোদি ১৫ মে এসব ভেন্টিলেটর নিয়ে একটি অডিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। অবশ্য মোদিও তার বক্তব্যে বলেছেন, উপযুক্তভাবে এসব ভেন্টিলেটর পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে প্রয়োজনে।