Home Health করোনার নতুন হটস্পট ইন্দোনেশিয়া

করোনার নতুন হটস্পট ইন্দোনেশিয়া

অতি সংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ইন্দোনেশিয়ায় করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। মহামারি ডেকে আনছে মহাবিপর্যয়। রোগীদের ভিড় উপচে পড়ায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। হাসপাতালে জায়গা  না পেয়ে হলওয়ে, তাঁবু কিংবা গাড়িতে অপেক্ষায় হাজার হাজার  মানুষ। ভারত ও ব্রাজিলকে ছাপিয়ে এরইমধ্যে করোনার নতুন হটস্পটে পরিণত হয়েছে দেশটি।

রোগীর তীব্র চাপের মধ্যেও ভাগ্যক্রমে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ যারা পেয়েছেন প্রচণ্ড হতাশা আর দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে তাদেরও। রোগী যেখানেই থাকুন না কেন, প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের যোগান দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট বলছে, কোভিড বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে ইন্দোনেশিয়া।

দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন বলেন, গত ঈদের ছুটির পরপরই শনাক্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই এর জন্য দায়ী।

সরকারি হিসাবেই দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৬। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৫৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে দেশটিতে দৈনিক অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের কোভিড শনাক্ত হচ্ছে।

গত বুধবার একদিনেই রেকর্ড সংখ্যক ৫৪ হাজার ৫১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয় প্রায় ৫৭ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় যারা নমুনা পরীক্ষা করছেন তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশেরও বেশি মানুষের কোভিড পজিটিভ আসছে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ায় করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্তের পরিসংখ্যানেও সেটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দোনেশীয় জনস্বাস্থ্য গবেষক ডিকি বুদিমনের ধারণা, সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা তিন থেকে ছয় গুণ বেশি।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম যে দেশটিতে শনাক্ত হয়, সেই ভারতে গত মে মাসে দৈনিক সংক্রমণ চার লাখ ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন সেটি ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। যদিও দেশটিতে নতুন করে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ মাসের গোড়ার দিকে জাভা দ্বীপের একটি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে ৬৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অঞ্চলটিতে সংক্রমণের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এরইমধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে  পড়েছে। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে মারাত্মক সংকট দেখা দেবে।

বালি ও জাভার মতো অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপগুলোতে গত মাসেই অতি সংক্রামক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে শুরু করে দৈনিক শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। কোভিডের প্রাদুর্ভাব কোনও কোনও স্থানে চিকিৎসা ব্যবস্থাকেই বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে রোগীদের ধারণক্ষমতা বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে হাসপাতালগুলো।

ইন্দেনেশিয়ার প্রতিবেশী ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডও বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের মুখে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করছে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যমান বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে টিকার ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। তবে বাস্তবে ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর একটি ডোজ নিয়েছে ১৫ শতাংশ মানুষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here