Home Bangladesh ইভ্যালির গোপন খবর

ইভ্যালির গোপন খবর


‘একবার ভাবুন তো ৪০ হাজার টাকার ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকায় কীভাবে দেয়া সম্ভব? এই অফার দেখে পাবলিকের মাথা তো পুরাই নষ্ট। অর্ডার পড়ল দুই হাজার জনের। তার মানে ইভ্যালির কাছে জমা হলো ৩ কোটি টাকা (২০০০ গুণ ১৫০০০)। কিন্তু তিন মাসেও ওই দুই হাজার লোককে পণ্য দেয়া হয় না। এই তিন মাসে ওই ৩ কোটি টাকা অন্য কোনো খাতে খাটিয়ে আয় করে ইভ্যালি।’

দেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ই-কমার্স সাইট হয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহে বারবার সময় নেয়ার অভিযোগ আছে। তাদের ব্যবসার কৌশলও স্পষ্ট নয়। এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে মানুষের মধ্যে।

এর মধ্যেই ই-কমার্স সাইট ইভ্যালিকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এক টাকা আয় করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে আলোচিত এই ই-কমার্স সাইটের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইভ্যালির লোক ঠকানোর গোপন কৌশল জানিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, ইভ্যালির নিজস্ব মূলধন ছিল খুবই কম। নেই নিজস্ব কোনো পণ্য। তারপরও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের ওপর অবিশ্বাস্য সব ছাড় দিয়ে আসছে, যে দামে মূল কোম্পানিও পণ্য বিক্রির চিন্তা করতে পারে না।

এ ছাড়া তারকাদের দিয়ে ব্র্যান্ডিং করছে; দামি দামি পণ্য উপহার দিয়ে প্রশংসাসূচক পোস্ট দেয়াচ্ছে। বিষয়টা এমন যেন তারকারা পণ্যটি ইভ্যালি থেকে কিনেছেন এবং কোনো রকম ঝুটঝামেলা ছাড়াই পেয়েছেন।

মূলত এভাবে ইভ্যালিকে সাধারণ মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। ক্রেতা ধরতে নিজেদের কর্মী দিয়ে ফেইক আইডি খুলে পণ্যের রিভিউ করায়। রিভিউ দেয়ায় ‘পেইড’ লোক দিয়েও, যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে।

আবার গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে কোনো সমালোচনা না করেন সেদিকেও আছে তাদের বিশেষ নজর। এভাবেই গত আড়াই বছর ধরে ব্যবসা করছে ইভ্যালি। কিন্তু গ্রাহক বা পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান- কোনো পক্ষের সঙ্গেই কথা রাখছে না, তাদের টাকা আটকে রাখছে মাসের পর মাস। তাদের কাছে দেনা রেখে সেই টাকা দিয়েই চালু করছে নতুন নতুন ব্যবসা। কিনছে কোম্পানিও।

পুরো বিষয়টাকে ‘কই মাছের তেল দিয়ে ইলিশ মাছ ভাজা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন ইভ্যালির এই কর্মকর্তারা।

তাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাড়া দিয়েছেন শুধু ইভ্যালির হেড অফ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শবনম ফারিয়া। কথা হয়েছে ইভ্যালির প্রশংসা করে পোস্ট দেয়া ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরের সঙ্গেও।

দুই টাকার জিনিস দেড় টাকায়: ব্যবসা কোথায়কোম্পানি চলছে কীভাবে?

ইভ্যালির ওই তিন কর্মকর্তার কাছে নিউজবাংলার প্রশ্ন ছিল- ধরেন, আপনারা দুই টাকার জিনিস দেড় টাকায় বিক্রি করেন। এটা কীভাবে সম্ভব? ভর্তুকির টাকাটাই বা আসছে কোথা থেকে?

জবাবে তাদের একজন উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একবার ভাবুন তো ৪০ হাজার টাকার ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকায় কীভাবে দেয়া সম্ভব? এই অফার দেখে পাবলিকের মাথা তো পুরাই নষ্ট। অর্ডার পড়ল দুই হাজার জনের। তার মানে ইভ্যালির কাছে জমা হলো ৩ কোটি টাকা (২০০০ গুণ ১৫০০০)। কিন্তু তিন মাসেও ওই দুই হাজার লোককে পণ্য দেয়া হয় না। এই তিন মাসে ওই ৩ কোটি টাকা অন্য কোনো খাতে খাটিয়ে আয় করে ইভ্যালি।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি এভাবে যে ৩ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে তোলে, তা ব্যাংকে রেখে ৫% হারেও যদি সুদ নেয়, তাতেও মাসে আয় হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৩ মাসে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা৷

‘এদিকে প্রতিষ্ঠানের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সে জন্য ২০০০ জনের মধ্যে ১০০ জনের জন্য ফ্রিজ কেনা হয় ৩৫ হাজার টাকা দরে। তাহলে খরচ হলো ৩৫ লাখ টাকা, হাতে থাকল ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখন যে ১০০ ফ্রিজ ডেলিভারি দেয়া হলো, যারা পেলেন তারা তো খুশিতে আত্মহারা। উৎফুল্ল হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেন, আমি পেয়েছি, আমি পেয়েছি। আর যারা পেলেন না তারা ভাবতে থাকলেন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করি। যেহেতু অনেকেই পেয়েছেন, তাই আমিও পাব। কিন্তু সেই পাওয়াটা ইভ্যালির ওয়েবসাইটে ঝুলেই থাকে। এ রকম অভিযোগ বাড়তেই থাকে।’

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে গ্রাহকদের অভিযোগ

৪৫ কার্যদিবসের নামে ‘নয়ছয়’

এই ই-কমার্স সাইট ৪৫ কর্মদিবসে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রাখে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা কেন হচ্ছে?

এ প্রসঙ্গে ইভ্যালির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি একটা ইনভয়েস নম্বর (পণ্য কেনার আইডি নম্বর) অ্যাডমিন প্যানেল দিলে বুঝতে পারি কার প্রোডাক্টটা কোন প্রসিডিউরে আছে। কাস্টমাররা ক্লেইম করেছেন কি না, প্রোডাক্ট পাইছেন কি না, আপডেটটা কী? বা ৪৫ কার্যদিবস হয়ে গেছে, প্রোডাক্টটা কেন ডেলিভারি হয় নাই ইত্যাদি বিষয় দেখা যায়।

‘এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে দেখানো হয়, যেগুলো ৪৫ দিন পার হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে পিকড দেখায়। এটা হলো পিও (প্রোডাক্ট অর্ডার) সেন্ট টু সেলার। তার মানে তারা বোঝায় অর্ডারটা সেলারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে ইভ্যালি। কিন্তু আসলে দেয়নি।’

ওই তিন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ইভ্যালি বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে ‘দালালের মতো’।

উদাহরণ দিয়ে তাদের একজন বলেন, ‘ধরেন কিয়াম নামে একটা কোম্পানি আছে। ওরা ট্রিমার, ফ্রাইপ্যান ইত্যাদি বিক্রি করে। ওদের একটা প্রোডাক্ট আপনি অর্ডার করেছেন। সে প্রোডাক্টটা ৪৫ দিন পার হওয়ার পর ইভ্যালির প্যানেলে দেখাচ্ছে পিকড। অথচ ইভ্যালি থেকে পারচেজ অর্ডার পাঠানো হয় নাই।

‘এখন কাস্টমার তো ভাবছে আমার প্রোডাক্টট তো সেলারের হাতে, সেলার আমাকে দিচ্ছে না কেন? ইভ্যালির কাজ তো ইভ্যালি করে দিছে। কাস্টমার ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তখন ইভ্যালি বলে আপনার পারচেজ অর্ডার সেলারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সেলার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রোডাক্ট দিয়ে দেবে। অথচ দুই মাস ছয় মাস পার হয়ে যায়, সেলার ওই কাস্টমারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করে না।’

তাহলে আসল ঘটনা কী জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা উদাহরণ দেই। আমি জেনেছি, কিয়াম ৭০ লাখ টাকা পাবে ইভ্যালির কাছে। এখন একটা কোম্পানি যখন আপনার কাছে ৭০ লাখ টাকা পায়, তখন আপনি নতুন ২০ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করলে তারা কি আর পণ্য দেবে?’

তিনি বলেন, ‘এদিকে কাস্টমার নানা ধরনের রিভিউ দেখে ভাবে, একই প্রক্রিয়ায় অর্ডার করে অনেকে তো প্রোডাক্ট পাইছে, আমি পাচ্ছি না কেন? আবার ইভ্যালি বলে, তারা পারচেজ অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। তাহলে দোষটা নিশ্চয়ই সেলারের। এভাবে বড় একটা শুভংকরের ফাঁকি চলে। এভাবে ডেট ওভার হয়, আবার ইভ্যালি দেখায় অনটাইমে অর্থাৎ ৪৫ দিনেই পিকড। অথচ কাস্টমার প্রোডাক্ট পায় না।’

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে গ্রাহকদের অভিযোগ

পিকড’ দেখিয়ে সান্ত্বনা

ইভ্যালির প্যানেলে পিকড দেখালে তাদের দায়িত্ব বা কাজ শেষ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির কিছু প্রসেস আছে। যেমন প্রথমে প্রসেসিং, তারপর শিফটিং, সবশেষ পিকড। এই পিকড মানে হলো, ইভ্যালির দায়িত্ব বা কাজ শেষ। ৪৫ দিন হয়ে গেলে ইভ্যালি অর্ডারটা সেলারের কাছে পাঠিয়ে দেবে, সেলার কুরিয়ারের কাছে দিয়ে দেবে। কিন্তু ইভ্যালি এখানে টাকা পরিশোধ না করেই বেশির ভাগ সময় কাস্টমারকে বোঝায় তাদের দোষ নেই তারা পারচেজ অর্ডার দিয়ে দিছে। সেলার প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিচ্ছে না। অপেক্ষা করেন ডেলিভারি দিয়ে দেবে। এভাবে দিনের পর দিন পার করতে থাকে।’

ইভ্যালি কেন এমন করে- নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তারা করে কারণ ওই যে টাকা। কাস্টমার অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পায় ইভ্যালি। ওটা নিয়ে তারা কাজে লাগায়। কাস্টমারকে যা তা বোঝানো যায়। ইভ্যালি ক্লায়েন্টকে বোঝায়, আমরা তো সবকিছু করে দিছি। সেলার কেন প্রোডাক্ট দিচ্ছে না, ওদের মনে হয় সাপ্লাই নাই। এভাবে নানান কিছু বোঝায়। কারণ কাস্টমার তো ফান্দে। অনেক সময় অপেক্ষা ছাড়া উপায় কী?

কৌশলে নগদ টাকা বের করে অন্য জায়গায় বিনিয়োগ

এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়ে ইভ্যালির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি দেখলাম সুলতান’স ডাইন ইভ্যালির কাছে কয়েক লাখ টাকা পায়। কাস্টমার যখন ইভ্যালির মাধ্যমে অর্ডার করেন তখন ইভ্যালি অর্ডারের টাকাটা পায়। সুলতান’স ডাইন কিন্তু প্রোডাক্ট দিয়ে দিচ্ছে। কারণ তারা হয়তো তাদের সুনামের কথা চিন্তা করেই খাবার দিয়ে দেয়। এভাবে ইভ্যালির কাছে দিনের পর দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের টাকা পড়ে থাকছে। ইভ্যালি কৌশলে ঋণগ্রস্ত থেকে নগদ টাকা বের করে তা অন্য খাতে ইনভেস্ট করে।’

ইভ্যালির কাছে পাওনার বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সুলতান’স ডাইনের কাস্টমার সার্ভিসে কর্মরত ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ইভ্যালির সঙ্গে সুলতান ডাইনের কোনো ব্যবসা নেই। আমাদের কর্তৃপক্ষ সেটা স্টপ করে দিয়েছে। ইভ্যালির ঋণ আছে। তবে এ বিষয়টা আমরা বলতে চাচ্ছি না।’

ইভ্যালির গোপন খবর
গাড়ি পেয়ে সালমান মুক্তাদিরের ফেসবুক পোস্ট

কই মাছের তেল দিয়ে ইলিশ মাছ ভাজা’

অভিযোগ আছে, কোনো পণ্যের জন্য গ্রাহক ইভ্যালিকে যে টাকা দেন, সেই টাকা চাইলেও আর ফেরত পান না। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের বদলে ‘আজেবাজে’ কোনো পণ্য কিনতে হয় টাকা উসুল করতে।

গ্রাহকদের টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণ একটা অ্যাকাউন্ট হয়। সেটা হলো ইভ্যালি ব্যালান্স বা ই-ওয়ালেট। এ ব্যালান্স কাস্টমার চাইলেই তুলতে পারেন না। ধরেন, কোনো কাস্টমার ৭০ হাজার টাকার একটা ফ্রিজ অর্ডার করলেন। কাস্টমার নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে অর্ডার ক্যানসেল করুক আর যাই করুক, রিফান্ড অন্য ইস্যু। যদি ইভ্যালির কারসাজিতে পড়ে সেলার আপনাকে বলে দেয় মাল ডেলিভারি দিতে পারবে না, তখন কাস্টমার বিরক্ত হয়ে যদি বলে দেয় অর্ডার ক্যানসেল, সে ক্ষেত্রে ব্যালেন্সটা ইভ্যালির হয়ে গেল।

‘টাকা তো ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সময় বাধ্য হয়ে কাস্টমাররা দুইটা মগ, জুতা-স্যান্ডেল হাবিজাবি কেনেন, যতটুকু পারে কিছু টাকা উসুল করার চেষ্টা করেন। অথচ মূল টাকাও ফেরত পাইল না, আবার প্রয়োজনীয় জিনিসটাও পাইল না। স্রেফ একটা চিটিংবাজির মধ্যে পড়ল কাস্টমার।’

তিনি বলেন, ‘বুঝলাম যে এটা ই-কমার্সের বিজনেস। কিন্তু সেলারকে টাকা না দিয়ে তাদের কাছে দেনা, আবার কাস্টমারের কাছ থেকে নগদ টাকা বুঝে নেয়া- এটা আবার কেমন ব্যবসা? লোভনীয় অফারের সুযোগ দিয়ে কাস্টমার ও কোম্পানিকে ঠকানো ছাড়া আর কিছুই না। আমার মনে হয়েছে, বিষয়টা কই মাছের তেলে কই মাছ ভাজা নয়, যেন ইলিশ মাছ ভাজা।’

‘প্রতারণা তো প্রতারণাই, আইন আগে থেকেই আছে’

এক পণ্যের বদলে অন্য পণ্য দেয়ার বিষয়টি প্রতারণার মধ্যে পড়ে এবং প্রচলিত আইনেই (দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায়) প্রতারণার জন্য শাস্তি আছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সোমবার নিউজবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার যে আইন আছে, সেখানে সংজ্ঞার মধ্যেই আছে যে, কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী একটা জিনিস দেয়ার কথা বলে সেটি না দিয়ে অন্য কোনো কিছু নিতে বাধ্য করে বা প্রতারণা করে তাহলে ফৌজদারি আইনে মামলা হবে। যেকোনো জায়গায় মামলা করতে পারবে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি। প্রতারণা মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছরের কারাদণ্ড। আছে জরিমানার বিধানও।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘তবে সম্প্রতি ই-কমার্স নিয়ে একটা আইন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটা পাবে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে গ্রাহক প্রতারণার শিকার হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে না।

‘সে ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ কমবে। তা ছাড়া এ আইনের আগেও তো প্রতারণার মামলার সুযোগ আছে। প্রতারণা তো প্রতারণাই। প্রতারণা বা চিটিংয়ের বিষয়ে আইন আগে থেকেই আছে।’

পেইড রিভিউ

প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বড় প্রতারণার বিষয়টা হলো, ইভ্যালির পেজে যেসব রিভিউ দেয়া হয় তার সবই পেইড রিভিউ। ওদের একটা গ্রুপ আছে, সেই গ্রুপের নাম ইভ্যালি হেল্প অফার অ্যান্ড রিভিউ। সেখানে সাড়ে ৭ লাখ সদস্য। ওটার মধ্যে ইভ্যালির কর্মীরা রিপ্লাই দেন ফেইক আইডি খুলে। ওখানকার ৯৮ শতাংশ পোস্ট হলো পেইড পোস্ট।

তাদের একজন বলেন, ‘অনেক সময় আমাদেরকে অর্থাৎ ইভ্যালির কর্মীদের ব্যক্তিগত আইডি দিয়ে পোস্ট দেয়ানো হয় যে, ইভ্যালি থেকে যথাসময়ের মধ্যে আমার প্রোডাক্টটি বুঝে পেলাম। আজ আমি খুব খুশি। এমন পোস্ট দেয়া হয়। সেগুলোতে অনেক ভিউ হয়। নিজেদের বানানো পোস্ট। এসব মেইনটেইন করার জন্য ইভ্যালিতে ১২৫ কর্মী কাজ করেন। এসব ফেইক পোস্ট রিপ্লাই শুধু মানুষকে ইভ্যালির দিকে টানার জন্য। কারণ বেশির ভাগ অরিজিনাল রিভিউয়ে থাকে সমালোচনা।’

ইভ্যালির গোপন খবর
গাড়ি পেয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট

গিফটের বিনিময়ে পোস্টের ডিল

তারা জানান, ইভ্যালির সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার আরেক কৌশল তারকাদের উপহার দিয়ে পোস্ট দেয়ানো, যেগুলো আসলে পেইড পোস্ট।

উদাহরণ দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেমন এর আগে ইউটিউবার সালমান মুক্তাদির আর ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান যে পোস্ট দিয়েছিলেন ইভ্যালিতে, সেটা ছিল পেইড পোস্ট। তারা তাদের পেজে পোস্ট লিখেছিলেন, আমি খুব অল্প সময়ে পেয়ে গেছি, অন টাইমে পেয়ে গেছি, ধন্যবাদ ইভ্যালি। তাদের ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে এগুলো আছে।’

সালমান মুক্তাদির ও মুস্তাফিজুর রহমান আসলে ইভ্যালি থেকে মোটরসাইকেল ক্রয় করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের মোটরবাইক গিফট করে পোস্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, যাতে সবাই আকৃষ্ট হয়। এই সুযোগে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা জড়ো করতে পারে ইভ্যালি। মানুষ তো আর এসব পেইড পোস্টের হিসাব বুঝবে না।

‘তার মানে কিন্তু ভিআইপিদের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য দেয়া, বিষয়টা এমন না। ডিল হয় যে, আমরা তোমাকে এই গিফট দেব, পরিবর্তে আপনার ফেসবুকে ইভ্যালি থেকে প্রোডাক্টটি পেয়েছেন- এমন একটি পোস্ট দিতে হবে। এভাবে পাবলিকের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালমান মুক্তাদির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাইক পেয়েছি। কিন্তু ইভ্যালির সঙ্গে আমার কোনো ডিল নেই। ইভ্যালি থেকে বাইক যে প্রক্রিয়ায় কিনতে হয়, সেটা আমার মেইনটেইন করতে হয়নি। এসব ক্ষেত্রে আমরা নিজের নাম-ফোন নম্বর ব্যবহার করি না। তাই ও রকম চালান নেই।’

নিউজবাংলা কথা বলার চেষ্টা করেছে ইভ্যালির বাইক নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে।

গত ২৮ জুন পাঁচবার তার নম্বরে ফোন করা হয়। এতে সাড়া না পেয়ে কয়েক ঘণ্টা পর নিউজবাংলার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএসও করা হয় তাকে। সবশেষ খুদেবার্তা পাঠানো হয় তার হোয়াটসঅ্যাপে। বলা হয়, ‘আপনার ফেসবুক পেজে ইভ্যালি বাইক সম্পর্কিত একটা পোস্ট আছে। সেটা উপহার পেয়েছেন কি না?’ এসব প্রশ্ন তিনি দেখলেও সাড়া দেননি এই তারকা ক্রিকেটার।

সাংবাদিকদের জন্য আলাদা তালিকা

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংবাদিকদের জন্য আলাদা তালিকা রয়েছে। তালিকায় থাকা সাংবাদিকরা অফারে কোনো কিছু অর্ডার করলে ৪৫ কর্মদিবসের আগেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়ে দেয়া হয়, যাতে নেগেটিভ কোনো নিউজ না হয়।

বিষয়টি দেখভালের জন্য একটা টিম রয়েছে। টিমটি বিভিন্ন হাউসের যেসব সাংবাদিক ইভ্যালির কাস্টমার তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই সার্ভিস দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

এ বিষয়ে জানতে রোববার বিকেলে নিউজবাংলা কথা বলেছে ইভ্যালির হেড অফ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শবনম ফারিয়ার সঙ্গে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু পিআর ডিপার্টমেন্টে আমি কাজ করি, যারা জার্নালিস্ট আছে, তারা আমার লোক। আমার সব কাজ যেহেতু সংবাদমাধ্যমে হয়, আমার কাছে এ রকম একটা লিস্ট আছে। সেখানে শুধু সাংবাদিক না, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মার্কেটিংয়ের লোকজনের নামও আছে।

‘এই লিস্টের গ্রাহকদের পণ্য আমি জরুরি ভিত্তিতে পাঠিয়ে দেই। সাইক্লোন অফারের ক্ষেত্রেও আমি এই গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ, অনেকেই ডাউট করছে, সাইক্লোন অফ হয়ে গিয়েছে, এখন আমাদের পণ্য আদৌ পাব কি না- এ রকম একটা ডাউট সাধারণ মানুষের মধ্যে হচ্ছে। এটাকে আমি স্বাভাবিক মনে করি।’

সাংবাদিকদের পণ্য সরবরাহ দ্রুত হলেও হাজার হাজার সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে শবনম ফারিয়া বলেন, ‘এই বিষয়টা আমার ডিপার্টমেন্ট না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

৫ লাখের মোটরসাইকেল ৩ লাখে কীভাবে

ইভ্যালির ওই তিন কর্মকর্তা জানান, মোটরবাইকের ক্ষেত্রে যেটা বলা হয়ে থাকে এত কম টাকায় বাইক দেয় কীভাবে? একটা ৫ লাখ টাকার বাইক ৩ লাখ টাকায় কীভাবে বিক্রি করে? যেখানে ওই বাইকটার দাম আসলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

এ ক্ষেত্রে ইভ্যালি এভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা একসঙ্গে অনেক বাইক আনে। তাদের ওয়্যারহাউস আছে। সুতরাং তাদের বাইকের দাম কম পড়ে, কম টাকায় দিতে পারে। কিন্তু আসল কথা হলো বাইকের যন্ত্রপাতির তো মিনিমাম একটা মূল্য আছে, ৪ লাখ ২০ হাজার। তার চেয়ে কম দামে কীভাবে ইভ্যালি বাইক বিক্রি করতে পারে?

ঘাটতির টাকা কীভাবে ম্যানেজ করে

কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে ইভ্যালি এই ঘাটতির টাকা কীভাবে ম্যানেজ করে? এ ক্ষেত্রে তারা চালাকি করে যে, তারা বাইকের জন্য যে টাকা কাস্টমারের কাছ থেকে অ্যাডভ্যান্স নেয়, সেই অ্যাডভান্সের টাকাটা অন্যভাবে অন্য বিজনেসে বিনিয়োগ করে। সেটা তারা কাউকে বলে না বা প্রকাশ করে নাই এখন পর্যন্ত।’

গ্রাহকের টাকায় ৬ মাসে ৬ কোম্পানি কেনার চিন্তা

কাস্টমারদের এসব টাকায় সম্প্রতি তারা ফ্লাইট এক্সপার্ট নামে একটা ট্রাভেল এজেন্সি কিনেছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি জেনেছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তারা আরও ছয়টি কোম্পানি কিনবে। যতটুকু শুনেছি, এগুলোর মধ্যে ই-হেলথ, ই-এগ্রো, ই-ফার্মা রয়েছে।

‘আমার জানামতে, ৬০ হাজারের মতো অর্ডার ঝুলে আছে ইভ্যালিতে। এর মধ্যে তিন হাজার মানুষের অর্ডার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এক বছরের বেশি সময়, যেগুলো দেড় মাসে ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। এদের বেশির ভাগের অর্ডার প্রথম ছয় মাস ঝুলিয়ে রাখা হয় সেলারের কাছে প্রোডাক্ট নাই বলে। বাকি ছয় মাস পার করেছে রিফান্ডের কথা বলে। কিন্তু কোনো কিছুই হয় নাই।’

জাস্ট আইওয়াশ’

এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই যে ইভ্যালির প্রধান মাঝে মাঝেই বলেন, আমরা একটা স্টার্টআপ কোম্পানি। কোম্পানির বয়স আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে আমাদের এমপ্লয়ি ১ হাজার ২০০ জন। এসব কথা জাস্ট আইওয়াশ।

‘যেমন ইভ্যালির একটা ডিপার্টমেন্ট আছে, সোস্যাল কমিউনিকেশনস। তাদের কাজ হলো ফেসবুকে রিপ্লাই করা, মেইলে রিপ্লাই করা এসব। এখানে এখন মোট ১৬০ জন কাজ করেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আইওয়াশটা এ রকম যে, আমি ১ হাজার ২০০ এমপ্লয়ি নিয়োগ দিছি। আমি একটা স্টার্টআপ কোম্পানি। তারা কোনো করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি পালন করতেছে না, ট্যাক্সের হিসাবও দেয় না। তাছাড়া তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে স্পনসর করে, এটাও একটা আইওয়াশ। বড় বড় মানুষের সঙ্গে অ্যাটাচ হয়ে পাবলিককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে- এটাও প্রতারণারই কৌশল।’

ডু শেয়ার’

ইভ্যালির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইভ্যালিতে যেসব কর্মী কাজ করে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করবে সে ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা বেঁধে দিয়েছে ইভ্যালি। শুধু পজিটিভ পোস্ট করার জন্য বাধ্য করা হয়।

‘হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের গ্রুপ আছে, সেখানে তারা পোস্ট লিখে দিয়ে বলে, ডু শেয়ার। শেয়ার করার পর হোয়াটসঅ্যাপে লিখতে হয়, ডান। এটাই হলো ইভ্যালির সিস্টেম।’

এ প্রসঙ্গে আরেক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা কর্মীদের বোঝায় যে নেগেটিভ কথা হবেই। ওটা ভালো। মাঝে ইভ্যালির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। অফিসের কর্মীদের তখন বোঝানো হয়, সরকারকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে ইভ্যালি নিজেই। পরে ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়া হলে সেটা ক্যাশ করে। বলা হয়, কোনো ঘাপলা না পেয়ে সরকার ছেড়ে দিয়েছে। যেহেতু সরকার ভেরিফাই করে দিছে, সাধারণ মানুষ ভাববে ইভ্যালি ভাগবে না।’

পুরো বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই তিনি সাড়া দেননি।

গত ২৮ জুন দুটি মোবাইল নম্বরেই বারবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি। একই দিন নিউজবাংলার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠানো হয় তার হোয়াটসঅ্যাপে। তা দেখেও কোনো উত্তর দেননি ইভ্যালির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় রাজধানীর ধানমন্ডির এই ভবনে। সম্প্রতি এই অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো কর্মকর্তাকে।

এরপর ৩০ জুন সকালে ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি রাসেলসহ কোনো কর্মকর্তাকে। চারজন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন পুরো অফিসে। তারা জানান, গত ২৭ জুন থেকে কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসছেন না। নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, প্রতিদিন বহু মানুষ অভিযোগ নিয়ে আসছিল অফিসে। এত লোকজন আসার কারণে করোনা ছড়াতে পারে, সে জন্য অফিস আগেই বন্ধ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ ৩ জুলাই তার হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি প্রশ্ন পাঠায় নিউজবাংলা। সেগুলো তিনি দেখলেও কোনো জবাব দেননি।

প্রশ্নগুলো হলো

১. ইভ্যালির কাছে কতগুলো প্রতিষ্ঠান টাকা পায়? আপনাদের দেনার পরিমাণ কত?

২. জানা গেছে, আগামী ৬ মাসে আপনারা নতুন ৬টি প্রতিষ্ঠান আনছেন। কতটুকু সত্য?

৩. ইভ্যালির কাছে এখন পর্যন্ত কতজন পণ্য অর্ডার করেছেন?

৪. গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩৫০ কোটি টাকা কীভাবে ফেরত দিবে ইভ্যালি?

৫. অনেকে আশঙ্কা করছে, ইভ্যালি গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবে। আসলেই কি তাই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here