কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র গ্রন্থকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনার জের ধরে তৃতীয় একটি পক্ষ দেশে নাশকতা চালানোর অপচেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় মিছিল থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। পরে অবশ্য পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে সারাদেশের সব ইউনিট ও জেলার পুলিশ সুপারদের বিশেষ সতর্ক অবস্থায় থাকার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যেকোনও ধরনের অপতৎপরতা ঠেকানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম এলাকাসহ কয়েকটি জায়গায় আজ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লোকজন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করেছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ন্ত্রণে এনেছি। মাঠে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। কেউ অপ্রীতিকর কিছু ঘটানোর চেষ্টা করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিএমপি কমিশনার যোগ করেন, ‘কোনও একটি ঘটনার পর তৃতীয় পক্ষ জলঘোলা করার চেষ্টা চালায়। সেজন্য আমরা সবসময়ই সতর্ক আছি।’
সম্প্রতি কুমিল্লার একটি মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনার পর পাশের চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরসহ কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এরপরই সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, পবিত্র গ্রন্থকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানোসহ যারা ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে’র চেষ্টা করবে তাদেরও আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, অতীতের মতো কুমিল্লার ঘটনার পরও তৃতীয় একটি পক্ষ বিভিন্ন স্থানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। এরই অংশ হিসেবে আজ ঢাকায় ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ নামে একটি ব্যানার নিয়ে কিছু লোকজন মিছিল করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মালিবাগ মুসলিম সমাজ নামে কোনও সংগঠনের নাম এর আগে তারা শোনেননি। সংগঠনটির নেপথ্যে কারা আছে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার নোয়াখালীর চৌমুহনীতে তৌহিদি জনতার ব্যানারে একদল ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিন চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানেও প্রতিমা ভাঙচুরসহ নাশকতার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, কুমিল্লায় সৃষ্ট ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ছিল। এ ঘটনায় মাঠপর্যায়ে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে বলা হয়। একইসঙ্গে দুটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করার জন্য সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কুমিল্লায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান
সূত্র মতে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে আগামী সপ্তাহের পুরোটাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশনায় আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে।
পঞ্চগড় জেলার পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলীর কথায়, ‘আমরা পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। কেউ যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে না পারে সেজন্য সতর্ক আছি। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। কেউ অপ্রীতিকর কিছু ঘটানোর চেষ্টা করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একটি সূত্র জানায়, গত তিন দিনে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পুজামণ্ডপকেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে অন্তত একডজন মামলা ও অর্ধশত সন্দেভাজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কুমিল্লার ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন।
একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রের তথ্যানুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা তত বেশি অপতৎপরতা শুরু করেছে। সম্প্রতি জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির বিভিন্ন পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, তাদের পেছনে বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার নেপথ্য মদদ রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে কেউ যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।’