Home Economics বিশ্ব তাইওয়ানের ওপর বিপজ্জনকভাবে নির্ভরশীল!

বিশ্ব তাইওয়ানের ওপর বিপজ্জনকভাবে নির্ভরশীল!

কয়েক বছর আগে থেকেই প্রযুক্তি খাতে তাইওয়ানের আধিপত্য বাড়ছিল। তবে চীন যখন তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক লেনদেন এড়াতে বিশ্বকে চাপ দিচ্ছে, ঠিক তখনই বিশ্ব নেতাদের অনুধাবন তারা দ্বীপটির ওপর কতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। চীন নিজেদের একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করা এ তাইওয়ান এখন কম্পিউটার চিপের জগতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর এ খাতের বেশির ভাগ ব্যবসা রয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) অধীনে। বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদনকারী এ সংস্থা অ্যাপলের স্মার্টফোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চক্ষমতার কম্পিউটিং চিপ উৎপাদন করছে।

সম্প্রতি অটো শিল্পের চিপ সংকটের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা তাইওয়ানকে পার্কিং সেন্সর থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস পর্যন্ত সবকিছুর জন্য সংস্থাগুলো চিপের ওপর নির্ভরশীল। আর এ চিপ সংকটের কারণে জার্মানির ভক্সওয়াগন এজি, যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড মোটর কোং ও জাপানের টয়োটা মোটর করপোরেশনসহ গাড়ি শিল্পের সংস্থাগুলো উৎপাদন কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। এর পরই বিশ্ব অর্থনীতিতে তাইওয়ানের ভূমিকা নতুন করে সামনে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারকরা সংকট মোকাবেলায় তাইওয়ান ও টিএসএমসিকে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাতে তাদের সরকারগুলোর সঙ্গে তদবির করছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গত বছর সংকটজনিত সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ইউরোপে নিজস্ব চিপ উৎপাদন ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

অটো শিল্পের আবেদনের এ চিত্রটি তুলে ধরেছে টিএসএমসির চিপমেকিং দক্ষতা কীভাবে তাইওয়ানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করে তুলেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এ পরিস্থিতি জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসায়ে তাইওয়ানের নেতৃত্বে বেইজিংয়ের ক্রমাগত আগ্রাসনের হুমকি মোকাবেলায় টোকিও থেকে ওয়াশিংটনের স্বনির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনাগুলোকে ত্বরান্বিত করেছে।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোকে নিষিদ্ধ করে প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র অ্যারিজোনায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের চিপ ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য টিএসএমসির সঙ্গে আলোচনা করছে। এছাড়া টেক্সাসে ১ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে একটি চিপ প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোং।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক চিপ মার্কেটে ইউরোপের অংশীদারিত্বকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা অর্জন করতে চাইছে। এখন ২৭ দেশের এ জোট বৈশ্বিক চিপ বাজারের ১০ শতাংশেরও কম অংশীদার। এ জোটটি সদস্য দেশগুলোতে তাইওয়ানের বিনিয়োগ বাড়াতেও উৎসাহিত করছে।

সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে তাইওয়ানই একমাত্র খেলোয়াড় নয়। এ খাতে বিশেষ করে চিপ ডিজাইন ও বৈদ্যুতিক সফটওয়্যার সরঞ্জামে যুক্তরাষ্ট্রও প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে আরো ছোট চিপ তৈরিতে অনন্য উচ্চতায় উঠে গেছে টিএসএমসি। এটি তাইওয়ানকে একটি বিস্তৃত বাস্তুতন্ত্র তৈরিতে সহায়তা করেছে।

পূর্ব-এশিয়ার দেশ জাপানও নিজ দেশে কারখানা স্থাপনের জন্য টিএসএমসিকে আকৃষ্ট করছে। সংস্থাটিও বিষয়টি বিবেচনা করছে। জাপানের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তা কাজুমি নিশিকাওয়া বলেন, টিএসএমসি আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। প্রত্যেককে এখন এ বিষয়টিকে মোকাবেলা করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here