Home International ‘যা করতে এসেছিলাম তা আমরা করেছি, তার চেয়ে বেশি করেছি’

‘যা করতে এসেছিলাম তা আমরা করেছি, তার চেয়ে বেশি করেছি’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত পূর্বে রেকর্ড করা ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখানে যা করতে এসেছিলাম তা করেছি, তার চেয়ে বেশি করেছি।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি কঠোর লড়াইয়ের মোকাবিলা করেছেন, কঠিনতম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন… ‘কারণ এসব করার জন্যই আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মেয়াদের শেষ দিনে দেওয়া ভাষণে আরো বলেন, ‘আমরা নতুন প্রশাসনের অভিষেক করতে যাচ্ছি এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সফল হোক সেই প্রার্থনা করছি।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ বেশ কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানান। ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে আমি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনাদের সেবা করা অনেক বেশি সম্মানের।’

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন প্রশাসনের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রাক্কালে দেওয়া শেষ ভাষণে, তাঁর পরিবার, হোয়াউট হাউসের কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রশাসন এবং দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আমার মেয়াদ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একসঙ্গে যা অর্জন করেছি তাতে সত্যিই গর্বিত। এই সপ্তাহে, একটি নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে এবং নতুন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ রাখবে এই প্রার্থনা করছি। আমার শুভকামনা রইল।’

ট্রাম্প বলেন, ‘মনে রাখতে হবে যে মার্কিনিদের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে, তবে মার্কিন জনগণ বিশ্বস্ত এবং শান্তিকামী নাগরিক, যারা তাদের দেশকে সমৃদ্ধ দেখতে চায়।

‘সারা যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটলে আক্রমণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়েছিল। এ রকম রাজনৈতিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। এটি কখনোই সহ্য করা যায় না।

‘মার্কিন জনগণের প্রার্থনা ও সমর্থনে আমরা যতটা সম্ভব ভেবেছি, তার চেয়ে বেশি অর্জন করেছি। কেউ ভাবেনি আমরা এতটা সফল হবো।

‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কর ছাড় ও সংস্কারের বৃহত্তম প্যাকেজটি আমরা পাস করেছি। আমরা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করেছি।। আমরা আমাদের ভঙ্গুর বাণিজ্য চুক্তিগুলো সুসংগঠিত করেছি, ভয়াবহ ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারত্ব এবং অসম্ভব প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে এসে একতরফা দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তি পুনর্বিবেচনা করেছি, এবং উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (নাফটা চুক্তি) যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা ত্রিদেশীয় বাণিজ্য চুক্তির (ইউএসএমসিএ) সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে স্থাপন করেছি। যা মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে খুব কার্যকর একটি চুক্তি।

‘এ ছাড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হলো আমরা চীনের ওপর ঐতিহাসিক শুল্ক আরোপ করেছি’, যোগ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প আরো বলেন, “আমরা উত্পাদন বৃদ্ধি করেছি, হাজার হাজার নতুন কারখানা খুলেছি এবং ‘মেড ইন ইউএসএ’ ট্যাগ আবারও প্রতিষ্ঠিত করেছি।”

‘কর্মজীবী পরিবারগুলোর জীবনকে আরো উন্নত করতে আমরা শিশু পরিচর্যা ও বিকাশের জন্য তহবিলে স্বাক্ষর করেছি। আমরা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগ দিয়ে এক কোটিরও বেশি মার্কিন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সুরক্ষিত করেছি।

‘যখন আমাদের দেশটি ভয়াবহ (কোভিড-১৯) মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিল, তখন আমরা একটি নয়, রেকর্ড ভেঙে অতি দ্রুত দুটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছি এবং অদূর ভবিষ্যতে আরো আসছে। তারা বলেছিল এটি করা সম্ভব নয়, তবে আমরা তা করেছি। এটাকে এখন চিকিৎসা ক্ষেত্রে অলৌকিক ঘটনা বলা হচ্ছে।

‘সর্বোপরি, আমরা পবিত্র ধারণাটি পুনঃস্থাপন করেছি যে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার জনগণের ডাকে সাড়া দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ (প্রতিশ্রুতি) ভুলে যায় না, কারণ প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকেরই কণ্ঠস্বর রয়েছে।

‘আমি কঠিন লড়াই, সবচেয়ে শক্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছি, কারণ এসব করার জন্যই আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন।

‘আমাদের এজেন্ডা ডান বা বাম সম্পর্কে ছিল না, কিংবা এটি রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট নিয়ে নয়, (আমাদের এজেন্ডা) একটি জাতির ভালোর জন্য ছিল, এবং এর অর্থ পুরো জাতির জন্য।

‘আমরা দেশে মার্কিন শক্তি এবং বিদেশে মার্কিন নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছি। আমরা বিশ্বের ইতিহাসে বৃহত্তম অর্থনীতি নির্মিত করেছি। আমরা আমাদের জোটকে পুনরুজ্জীবিত করেছি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চীনের সামনে দাঁড়াতে সমবেত করেছি, যা এর আগে কখনো হয়নি।

‘আমাদের সাহসী কূটনীতি এবং নীতিগত বাস্তবতার ফলস্বরূপ, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি অর্জন করেছি। এটি একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের উদয় এবং আমরা আমাদের সেনাদের ফিরিয়ে এনেছি ।

‘আমি এই দশকের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশেষ গর্বিত যে কি না কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘(আজ) বুধবার দুপুরে আমি যখন নতুন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি জানাতে চাই যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছি, তার কেবল সূচনা হলো।’

‘যতক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ তাদের হৃদয়ে গভীরভাবে দেশের প্রতি ভালবাসা ধরে রাখবে, ততক্ষণ এই জাতি অর্জন করতে পারে না এমন কিছুই নেই। আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হবে। দেশের মানুষ সমৃদ্ধ হবে। আমাদের ঐতিহ্য লালিত হবে। আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে। এবং আমাদের ভবিষ্যত আগের চেয়ে আরো উজ্জ্বল হবে’, যোগ করেন ট্রাম্প।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক আজ বুধবার। এদিন স্থানীয় সময় দুপুরে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে শপথবাক্য পাঠ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন। একই সঙ্গে সহযোগী বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেওরের কাছে শপথবাক্য পড়ে দায়িত্ব নেবেন দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here